, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


ঢাবিতে বাংলা পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় পাকিস্তানি শিক্ষার্থীর আক্ষেপ

  • আপলোড সময় : ০৭-০৯-২০২৩ ১২:২০:০৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৭-০৯-২০২৩ ১২:২০:০৭ অপরাহ্ন
ঢাবিতে বাংলা পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় পাকিস্তানি শিক্ষার্থীর আক্ষেপ
এবার বাংলা ভাষাকে ভালোবাসেন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী মো. তাহির। তার বাড়ি লাহোরের কাছে একটি গ্রামে। তার বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এবং মা গৃহিণী। তাদের একমাত্র সন্তান তিনি। পাকিস্তানে বাংলা শেখার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় চার মাস আগে বাংলাদেশে আসেন তাহির। নিজের প্রচেষ্টায় তিনি বাংলা বলা, লেখা ও পড়া শেখেন। তার ইচ্ছা, ঢাবির বাংলা বিভাগে পড়ে বাঙালি ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবেন।

পরে পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে বাংলা স্কুলও প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন তার। তবে বহু চেষ্টা করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে পড়ার সুযোগ না পেয়ে আক্ষেপ করেছেন পাকিস্তানি তাহিরের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক সিন্ডিকেট সভায় পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাকে ভর্তি করার সুযোগ নেই। তবে তিনি অনুরোধ করেছেন, ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করার।

গত ২০১৫ সালের ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় পাকিস্তানের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, একাত্তরে গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করা পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যায়তনিক, গবেষণামূলক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াকেন্দ্রিক সব ধরনের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিন্ন করা হলো। এখন থেকে ঢাবির শিক্ষক কিংবা ছাত্রছাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সফরে যাবে না ও দেশটির সঙ্গে কোনো শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রম পরিচালিত হবে না।

এদিকে তাহির জানান, স্কুলে তাদের পড়ানো হয় পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল। ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন হওয়ার কারণে একটি যুদ্ধ হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়। এর আগে বাঙালিরা তাদের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রতিবাদ শুরু করে। এটা জানার পর এই ভেবে খারাপ লাগে যে, ভাষার জন্য কেন আলাদা হয়ে গেল? এরপর তার মধ্যে বাংলা ভাষা শেখার আগ্রহ জাগে।

এদিকে ভাঙা ভাঙা বাংলায় তিনি বলেন, ‘করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আমি ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু একজন অধ্যাপক এবং একজন প্রভাষক দিয়ে বিভাগটি চলছে। বইগুলো এত পুরোনো যে, তার পৃষ্ঠা উল্টালেও ছিঁড়ে যায়। আমি করাচিতে বসবাসরত বাঙালিদের সঙ্গেও দেখা করতে যাই। কয়েকজনকে অনুরোধও করি বাংলা শেখাতে। কিন্তু তারা সময় করে উঠতে পারেননি।’

তাহির জানান, ‘পাকিস্তানের বাঙালি পরিবারগুলোর বর্তমান প্রজন্মও বাংলা ভুলে গেছে। তবে পাকিস্তানের মানুষ বাংলাদেশকে খুবই ভালোবাসে। আমি যতটুকু বাংলা শিখেছি, নিজের প্রচেষ্টায় অনলাইনের মাধ্যমে অনেক পাকিস্তানিকেই তা শিখিয়েছি।’ তাহির জানান, তিনি ঢাবির উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। উপাচার্য জানান, তিনি একা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হলে পাকিস্তানি ছাত্ররা এখানে ভর্তি হতে পারবে।

তাহির বলেন, ‘এটা শুনে আমার খারাপ লেগেছে, এ দেশেরই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে আমার দেশের ছাত্ররা পড়ছেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়া যাবে না?’ তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সব ধরনের সম্পর্ক আছে। তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে এমন বাধা কেন? এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী এসেছিল আমার কাছে। কিন্তু নীতিমালার কারণে তাকে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। ওই সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের শিক্ষা ও জ্ঞান বিনিময় বন্ধ রয়েছে।’
‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি‘ থাকছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে

‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি‘ থাকছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে